Page 18

বুখারী শরীফ

১২৭। কায়স ইবনু হাফস (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একবার আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর সঙ্গে মদিনার বসতিহীন এলাকা দিয়ে চলছিলাম। তিনি একখানি খেজুরের ডালে ভর দিয়ে একদল ইয়াহুদীর কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তারা একজন অন্যজনকে বলতে লাগল, ‘তাঁকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কর। ’ আর একজন বলল, ‘তাঁকে কোন প্রশ্ন করো না, হয়ত এমন কোন জওয়াব দিবেন যা তোমার পছন্দ করো না। ’ আবার তাদের কেউ কেউ বলল, ‘তাঁকে আমরা প্রশ্ন করবই। ’ তারপর তাদের মধ্য থেকে এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ‘হে আবূল কাসিম রূহ কী?’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ করে রইলেন, আমি মনে মনে বললাম, তাঁর প্রতি ওহী নাযিল হচ্ছে। তাই আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। তারপর যখন সে অবস্থা কেটে গেল তখন তিনি বললেনঃ “তারা তোমাকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল, রূহ আমার প্রতিপালকের আদেশঘটিত এবং তাদেরকে সামান্যই জ্ঞান দেওয়া হয়েছে। ” (১৭:৮৫) আ‘মাশ (রহঃ) বলেন, এভাবেই আয়াতটিকে আমাদের কিরাআতে –এর স্থলে পড়া হয়েছে।

১২৮। উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ) আসওয়াদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ইবনু যুবায়র (রাঃ) আমাকে বললেন, ‘আয়িশা (রাঃ) তোমাকে অনেক গোপন কথা বলতেন। বল তো কাবা সম্পর্কে তোমাকে কী বলেছেন? আমি বললাম, তিনি আমাকে বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘আয়িশা! তোমাদের কওম যদি (ইসলাম গ্রহণে) নতুন না হত, ইবনু যুবায়র বলেনঃ কুফর থেকে; তবে আমি কাবা ভেঙ্গে ফেলে তার দুটি দরজা বানাতাম। এক দরজা দিয়ে লোক প্রবেশ করত আর এক দরজা দিয়ে বের হত। (পরবর্তীকালে মক্কার আধিপত্য পেলে) তিনি এরূপ করেছিলেন।

১২৯। এ হাদীস উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ) ‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন।

১৩০। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার মু‘আয (রাঃ), রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর পিছনে সাওয়ারীতে উপবিষ্ট ছিলান, তখন তিনি তাঁকে ডাকলেন, হে মু‘আয ইবনু জাবাল! মু‘আয (রাঃ) উত্তর দিলেন, ‘আমি হাযির ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং (আপনার আদেশ পালনের জন্য) প্রস্তুত। তিনি ডাকলেন, মু‘আয! মু‘আয (রাঃ) উত্তর দিলেন, ‘আমি হাযির ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং প্রস্তুত। ’ তিনি আবার ডাকলেন, মু‘আয। তিনি উত্তর দিলেন, ‘আমি হাযির ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং প্রস্তুত। এরূপ তিনবার করলেন। এরপর বললেনঃ যে কোন বান্দা আন্তরিকতার সাথে এ সাক্ষ্য দেবে যে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল ’ তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নাম হারাম করে দেবেন। মু‘আয (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি কি মানুষকে এ খবর দেব না, যাতে তারা সুসংবাদ পেতে পারে?’ তিনি বললেন, ‘তাহলে তারা এর উপর ভরসা করে বসে থাকবে। ’ মু‘আয (রাঃ) (জীবনভর এ হাদিসটি বর্ণনা করেন নি) মৃত্যুর সময় এ হাদিসটি বর্ণনা করে গেছেন যাতে (ইল্‌ম গোপন রাখার) গুনাহ না হয়।

১৩১। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার কাছে বর্ণনা করা হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আয (রাঃ) কে বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহর সঙ্গে কোনরূপ শিরক না করে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করবে সে জান্নাতে দাখিল হবে। (এ কথা শুনে) মু‘আয (রাঃ) বললেন, ‘আমি কি লোকদের সুসংবাদ দেব না?’ তিনি বললেন, ‘না, আমার আশংকা হচ্ছে যে, তারা এর উপরই ভরসা করে বসে থাকবে। ’

১৩২। মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে উম্মে সুলায়ম (রাঃ) এসে বললেনঃ ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহ হক কথা প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করেন না। স্ত্রীলোকের স্বপ্নদোষ হলে কি গোসল করতে হবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘হ্যাঁ, যখন সে বীর্য দেখতে পাবে। ’ তখন উম্মে সালমা (লজ্জায়) তাঁর মুখ ঢেকে নিয়ে বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! স্ত্রীলোকের স্বপ্নদোষ হয় কি?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তোমার ডান হাতে মাটি পড়ুক! (তা না হলে) তাঁর সন্তান তাঁর আকৃতি পায় কিরূপে?’

১৩৩। ইসমা‘ঈল (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ গাছের মধ্যে এমন এক গাছ আছে যার পাতা ঝরে পড়ে না এবং তা হল মুসলিমের দৃষ্টান্ত। তোমরা আমাকে বল তো সেটা কোন গাছ? তখন লোকজনের খেয়াল জঙ্গলের গাছপালার প্রতি গেল। আর আমরা মনে হতে লাগল যে, তা হল খেজুর গাছ। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, ‘কিন্তু আমি লজ্জাবোধ করলাম। ’ সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) বললেন, ‘ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনই আমাদের তা বলে দিন। ’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘তা হল খেজুর গাছ। ’ আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, ‘তারপর আমি আমার পিতাকে আমার মনে যা এসেছিল তা বললাম। ’ তিনি বললেন ‘তুমি তখন তা বলে দিলে অমুক অমুক জিনিস লাভ করার চাইতে আমি বেশী খুশী হতাম। ’

১৩৪। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ‘আলী ইবনু আবী তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমার অধিক পরিমাণে ‘মযী’ বের হত। তাই এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – কে জিজ্ঞাসা করার জন্য মিকদাদকে বললাম। তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘এতে কেবল উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে হয়। ’

১৩৫। কুতায়বা ইবনু সা‘ঈদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ এক ব্যাক্তি মসজিদে দাঁড়িয়ে বলল, ‘ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি আমাদের কোথা থেকে ইহরাম বাঁধার নির্দেশ দেন?’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মদিনাবাসী ইহরাম বাঁধবে ‘যু’ল-হুলায়কা’ থেকে, সিরিয়াবাসী, ইহরাম বাঁধবে ‘জুহফা’ থেকে এবং নাজদবাসী ইহরাম বাঁধবে ‘করন’ থেকে। ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, অন্যরা বলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এও বলেছেনঃ ‘এবং ইয়ামানবাসী ইহরাম বাঁধবে ‘ইয়ালামলাম’ থেকে। ’ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেছেন, ‘এ কথাটি আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বুঝে নিতে পারিনি। ’

১৩৬। আদম (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যাক্তি তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, ‘মুহরিম কী কাপড় পরবে?’ তিনি বলেনঃ ‘জামা পরবে না, পাগড়ী পরবে না, পাজামা পরবে না, টুপি পরবে না এবং কুসুম বা যা‘ফরান রঙে রঞ্জিত কোন কাপড় পরবে না। জুতা না থাকলে চামড়ার মোজা পরতে পারে, তবে এমনভাবে কেটে ফেলতে হবে যাতে মোজা দু’টি পায়ের গিরার নিচে থাকে।

প্রথম পৃষ্ঠা আগের পৃষ্ঠা ১৯ ২০ ২১ ২২ ২৩ ২৪ ২৫ পরবর্তী পৃষ্ঠা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thanks for your comment

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

নামাজের গুরুত্ব

নামায সব এবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবাদত হওয়ার পেছনে অনেক গুলো কারন রয়েছে । প্রথমতঃ নামাযরত অবস্থায় কোন পার্থিব কাজ করা যায় না । কেননা...

Popular Posts