ফযর নামাযের নিয়ত

ফযর নামাজের নিয়ত

ফযরের সুন্নত দুই রাকাআতের নিয়্যাত:

نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى رَكْعَتَىْ صَلَوةِ الْفَجْرِ سُنَّةُ رَسُوْلُ للَّهِ تَعَا لَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ-

উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসালি্লয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকা’আতাই সালাতিল ফাজরে সুন্নাতু রাছুলিল্লাহি তা’আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলাজিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

অনুবাদ: ফজরের দুরাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে কিবলামুখী হয়ে নিয়্যত করলাম, আল্লাহু আকবার।

ফযরের দুই রাকাআত ফরয নামাযের নিয়্যাতঃ

نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى رَكْعَتَىْ صَلَوةِ الْفَجْرِ فَرْضُ للَّهِ تَعَا لَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ-

উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসালি্লয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকা’আতাই সালাতিল ফাজরে ফারযুল্লাহি তা’আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলাজিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

অনুবাদ: ফজরের দুরাকাত ফরয নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে কিবলামুখী হয়ে নিয়্যত করলাম, আল্লাহু আকবার।

তাকবীরে তাহরীমা

তাকবীরে তাহরীমা < p>

এই তাকবীরের দ্বারাই নামাজ আরম্ভ করা হয়:

سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَا لَى جَدُّكَ وَلاَ اِلَهَ غَيْرُكَ

উচ্চারণ: সুবাহানাকা আল্লাহুমা ওয়া বিহামদিকা ওয়াতাবারা কাসমুকা ওয়া তায়ালাজাদ্দুকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা ।

অনুবাদ: হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র সকল প্রশংসা তোমারই । তোমার নাম মঙ্গলময় । তোমার মহিমা অতীব উচ্চ । তুমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই ।

জায়নামাজে দাঁড়িয়ে পড়ার দোআ

জায়নামাজে দাঁড়িয়ে পরার দোয়া

اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَالسَّمَوَتِ

وَاْلاَرْضَ حَنِيْفَاوَّمَااَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ

উচ্চারণঃ ইন্নি ওয়াজ্জাহাতু ওজহিয়া লিল্লাযী ফাতারাচ্ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাঁও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন ।

অনুবাদ: নিশ্চই আমি তাঁহার দিকে মুখ ফিরাইলাম, যিনি আসমান জমিন সৃষ্টি করিয়াছেন । আমি মুশরিকদিগের দলভুক্ত নহি ।

নামাজের নিষিদ্ধ কাজ সমূহ

নামাজের নিষিদ্ধ কাজ সমূহ

রাসুল সা. সালাতের মধ্যে কতগুলো কার্যকে নিষিদ্ধ করেছেন। তা হলো:-

(১) দু’পা একত্রে মিলিয়ে দাঁড়ানো (নারীগন দাঁড়াতে পারে)

(২) এক পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ানো

(৩) নিতম্বের উপর বসে হাটুদ্বয় খাড়া করে দু হাত যমীনে রাখা

(৪) চাদর বা অন্য কাপড় এমনভাবে জড়িয়ে নেয়া যে, হাত তার ভিতরে থাকে এমনকি রুকু সিজদার সময়ও তা বের হয়না

(৫) সিজদার সময় বস্র উঠানো

(৬) জামার উপর লুঙ্গি বা পাজামা পরিধান (ইমাম আহমদের মতে)

(৭) কোমরে হাত রাখা

(৮) তকবীরের সাথে তিলাওয়াত বা তসবীহ মিলিয়ে পড়া

(৯) ইমামের আগে বা সাথে মিলিয়ে তকবীর বলা

(১০) প্রথম সালামের সাথে দ্বিতীয় সালাম মিলিয়ে বলা

(১১) প্রাকৃতিক প্রয়োজনের বেগ নিয়ে সালাত শুরু

(১২) খাদ্য-পানীয়ের উপায় থাকা সত্ত্বেও অধিক ক্ষুধা-তৃঞ্চা নিয়ে সালাত

(১৩) ক্ষুদ্ধ বা ক্রুদ্ধ দিল নিয়ে সালাতে দাড়ানো।

এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, সালাতের মধ্যে সাতটি কাজ শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে--

(১) নাক দিয়ে রক্ত আসা (অসুস্থতা ভিন্ন কথা)। বিনা কারণে এরূপ হলে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইবে।

(২) নিদ্রা আসা

(৩) মনে কুমন্ত্রণার উদয়

(৪) হাই তোলা

(৫) শরীর ও মাথা চুলকানো

(৬) এদিক ওদিক দৃষ্টিপাত

(৭) কোন কিছু নিয়ে খেলা করা

নামাজের নিষিদ্ধ সময়

নামাজের নিষিদ্ধ সময়

সূর্যোদয়ের সময়, ঠিক দ্বিপ্রহর এবং সূর্যাস্তের সময় যে কোন নামায পড়া, সিজদার তেলাওয়াত করা জায়েয নাই। যদি আছরের নামায না পড়িয়া থাকে তবে শুধু মাত্র ঐ দিনকার আছরের নামায সূর্যাস্তের সময় পড়িতে পারিবে । তবে উহাও মাকরূহ তাহারীমির সাথে আদায় হইবে । সুন্নত ও নফল নামাযের নিষিদ্ধ সময়ঃ

(১) ফজরের সময় হইলে ফজরের সুন্নত দুই রাকাআত ছাড়া অন্য কোন সুন্নত বা নফল পড়া।

(২) সূর্যাস্তের পর মাগরিবের নামায পড়ার পূর্ব পর্যন্ত ।

(৩) উভয় ঈদের নামায পড়া পর্যন্ত। এই সমস্ত সময় নামায পড়া মাকরূহ । কাযা, জানাযা নামায, সিজদায়ে তেলাওয়াত করা জায়েয আছে ।

(৪) ফরয নামাযের ইক্বামত বা জামাতের সময় ও সুন্নত বা নফল পড়া মাকরূহ ।

(৫) নামাযের সময় সংকীর্ণ হইলে ওয়াক্তিয়া ফরয ব্যতীত অন্য যে কোন নামায পড়া মাকরূহ । জুমআর খুৎবার জন্য ইমাম মিম্বরে দাঁড়াইলেই সুন্নত বা নফল পড়া মাকরূহ ।

সুন্নাত নামাজের নিয়ম

সুন্নাত নামাজের নিয়ম

(১)ফজরের ফরযের পূর্বে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।

(২) জোহরের ফরযের আগে চার রাকাত ও ফরযের পরে দুই রাকাত নামাজআদায় করা সুন্নত।

(৩) জুমার ফরযের আগে চার রাকাত ও ফরযের পরে চার রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।

(৪) মাগরিবের ফরযের পরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।

(৫) এশার ফরযের পরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।

এসকল সুন্নত নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বলা হয়।

কোন ধরনের ওযর ছাড়া এসুন্নতগুলো তরক কারী গুনাহগার হবে।

সুন্নত নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতেহার পর সূরা মিলাতে হবে আর বাকী সকল নিয়ম অন্যান্য নামাজের মতই। সুন্নত নামাজ যদি সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা ও নফল হয় এবং চার রাকাত বিশিষ্ট হয় , তাহলে দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহ্হুদের পরে দুরুদ শরীফ ও দু‘আয়ে মাছুরা পড়াও উত্তম ।

ফরজ নামাজের ওয়াক্ত সমূহ

ফরজ নামাজের ওয়াক্ত সমূহ

ইসলাম মুসলমানদের উপর দিন ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছে। আর এগুলো হল, ফজরের নামায, যোহরের নামায, আসরের নামায, মাগরিবের নামায এবং এশার নামায।

(১) ফজরের নামায: ফজরের নামায দুই রাকাত। এর সময় ফজরেসানী অর্থাৎ রাতের শেষাংশে, পূর্বাকাশে, শ্বেত আভা প্রসারিত হওয়া থেকে নিয়ে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত।

(২) যোহরের নামায: যোহরের নামায চার রাকাত। এর সময় মধ্যকাশ থেকে সূর্য ঢলে যাওয়ার পর মূল ছায়া ব্যতীত প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তার সমান হওয়া পর্যন্ত।

(৩) আসরের নামায: আসরের নামায চার রাকাত। এর সময় যোহরের সময় শেষ হবার পর আরম্ভ হয় যাওয়ালের ছায়া ছাড়া প্রত্যেকটি জিনিসের ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত। (এটি সবচে উত্তম ওয়াক্ত) আর জরুরী ওয়াক্ত সূর্য নিস্তেজ হয়ে রোদের হলুদ রং হওয়া পর্যন্ত।

(৪) মাগরিবের নামায: মাগরিবের নামায তিন রাকাত। এর সময় সূর্যাস্তের পর থেকে শফক্বে আহমার অর্থাৎ পশ্চিম আকাশে লোহিত রং অদৃশ্য হওয়ার আগ পর্যন্ত।

(৫) এশার নামায: এশার নামায চার রাকাত। এর সময় মাগরিবের সময় শেষ হওয়ার পর থেকে রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত। অথবা রাতের প্রথম অর্ধাংশ পর্যন্ত।

ফরজ নামায

ফরজ নামায < p>

দৈনন্দি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ ।

(১) ফজরের দুই রকাত।

(২) জোহরের চার রাকাত। আর জুমার দিন জোহরের পরিবর্তে জুমার দুই রাত।

(৩) আছরের চার রাকাত।

(৪) মাগরিবের তিন রাকাত।

(৫) এশার চার রাকাত ।

ফরয নামাজের নিয়ম

পবিত্রতা অর্জন করে নামাজের নিয়্যত করবে। আপনি কোন নামাজ পড়ছেন মনে মনে এতটুকু থাকাই নিয়্যতের জন্য যথেষ্ট। তবে তার সাথে মুখে উচ্চারণ করা উত্তম। তারপর ক্বিবলামুখি হয়ে দাড়াবে, দুই পায়ের গুড়ালি বরাবর থাকবে এবং দুই পায়ের মাঝে চার আংগুল পরিমাণ ফাকা থাকবে।

তারপর তাকবীরে তাহ্রীমা অর্থাৎ الله اڪبر (আল্লাহু আকবার) বলে উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠাবে।, এ ক্ষেত্রে হাতের আংগুলগুলো সাভাবিক অবস্থায় ক্বিবলা মুখি থাকবে আর উভয় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি উভয় কানের লতি বরাবর থাকবে।

তারপর হাত নামিয়ে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠা অঙ্গুলি দ্বরা হালকা বানিয়ে বাম হাতের কবজি ধরবে আর বাকী আঙ্গুলগুলো বাম হাতের উপর রাখবে।

অতঃপর নাভির নিচে বাধবে। দাড়ানো অবস্থায় দৃষ্টি থাকবে সেজদার জায়গায় । তারপর ছানা পড়বে

উচ্চারণঃ সুবহানাকাল্লাহুম্মা অবিহামদিকা অতাবারকাসমুকা অতাআলা জাদ্দুকা অলাইলাহা গইরুকা

তারপর اعوذ بالله من الشيطن الرجيم

(উচ্চারণঃ আয়ুজু বিল্লাহি মিনাশ্শাই ত্বর্নিরজীম।) পড়বে এবং بسم الله الرحمن الرحيم (উচ্চারণঃ বিসমিল্লার্হিরহমার্নিরহীম। অর্থঃ পরম করুনাময় দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি) পড়বে।

তারপর সূরা ফাতেহাপড়বে الحمد لله رب العلمين الرحمن الرحيم مالڪ يوم الدين اياڪ نعبد و اياڪ نستعين اهدنا الصراط المستقيم صراط الذين انعمت عليهم غيرالمغصوب غليهم و لا الضلين

উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন আররহমানির রহীম মালিকি ইয়াওমিদ্দিন, ইয়্যাকানা’বুদু অইয়্যাকানাসতাইন। ইহদিনাছছিরতল মুসতাকীম। ছিরতল্লাযিনা আনআ’মতা আলাইহিম গইরিল মাগধুবি আলাইহিম। অলাদ্দল্লিন। তারপর কোআনে কারীম থেকে যে কোন একটি সূরা মিলাবে। যেমন ফীল।

الم تر ڪيف فعل ربڪ باصحب الفيل الم يجعل ڪيد هم في تضليل و ارسل عليهم طيرا ابابيل ترميهم بحجارة من سجيل فجعلهم ڪعصف مآ ڪول

উচ্চারণঃ আলামতার কাইফা ফায়ালা রাব্বুকা বিআছহাবিল ফীল । আলাম ইয়াজ আল কাইদাহুম ফী তাদলীল। অআরসালা আলাইহিম তাইরান আবাবিীল। তারমীহিম বিহিজারতিম মিনসিজ্জীল। ফাজাআলাহুম কাআসফিম মাকূল। তারপর তাকবীর বলে রুকুতে যাবে, হাতের আংগুলগুলো ফাকা রেখে দুই হাত দ্বারা উভয় হাটুকে ভালভাবে আকড়ে ধরবে। এবং মাথা, পিঠ ও মাজা সমান থাকবে কোন উঁচু নিচু থাকবে না। রুকুতে থাকা অবস্থায় দৃষ্টি থাকবে পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলির দিকে। তারপর রুকুর তাসবীহ পড়বে।

سبحان ربي العظيم

উচ্চারণঃ সুবহানা রাব্বিয়াল আজীম। অর্থঃ আমার মহান প্রতিপালক পবিত্র। তিন বার পড়বে। তবে পাঁচ বার , সাত বারও পড়তে পারবে।

তারপর سمع الله لمن حمده (উচ্চারণঃ সামিয়াল্লাহুলিমান হামিদাহ । অর্থঃ যে আল্লাহর প্রশংসা করে আল্লাহ তার প্রশংসা শুনেন।) বলে রুকু থেকে সুজা হয়ে দাড়াবে। তারপর الله اڪبر বলে সেজদায় যাবে । সেজদায় যাওয়ার সময় দুই হাতে হাটু ধরে সর্বপ্রথম উভয় হাটু একত্রে জমীনে রাখবে।

তারপর হাতের আঙ্গুলগুলো মিলানো অবস্থায় দুই হাত জমীনে একত্রে রাখবে। এবং চেহারার চওড়া অনুযায়ী দুই হাতের মাঝে ফাঁকা রাখবে।তারপর দুই হাতের মাঝে সেজদা করবে প্রথমে নাক তারপর কপাল রাখবে উভয় হাতের শধ্যখানে বৃদ্ধ আঙ্গুলদ্বয়ের বরাবরে নাক রাখবে । নজর নাকের উপর রাখবে ।

পুরুষের পেট রান থেকে বাহু পাজর থেকে হাতের কনুই জমীন থেকে পৃথক রাখবে। পায়ের আঙ্গুল সমূহকে কিবলামুখী করে রাখবে এবং দুই পায়ে গুড়ালি মিলিয়ে না রেখে বরং টাকনু কাছা কাছি রাখবে। যথা সম্ভব পায়ের আঙ্গুলগুলো জমীনের সাথে চেপে ধরে আঙ্গুলের অগ্রভাগ ক্বিবলার দিকে রাখবে।

সেজদার মধ্যে তিন বার سبحان ربي الاعلى পড়বে। তবে পাঁচ বার , সাত বারও পড়তে পারবে।

(উচ্চারণঃ সুবহানা রব্বিয়াল আয়লা । অর্থঃ আমার মহান প্রতিপালক মহা পবিত্র।) তিনবার সাতবারও পড়তে পারবে।

তারপর الله اڪبر বলে সেজদা থেকে উঠে বসবে। প্রথম কপাল তারপর নাক তারপর হাত উঠাবে। তারপর বাম পা জমীনে বিছিয়ে তার উপর বসবে। আর ডান পা দার করিয়ে রাখবে । পায়ের আঙ্গুলগুলো কিবলামুখী করে জমীনে রাখবে।

দুই হাত উভয় রানের উপর রাখবে। হাতের আঙ্গুলগুলো সামান্য ফাঁকা রেখে আঙ্গুলের মাথার অগ্রভাগ হাটুর কিনারা বরাবর রাখবে। তারপর اللهم اغفرلى ارحمني وارزقني واهدنى পড়বে। তারপর الله اڪبر বলে দ্বিতীয় সেজদা করবে।

দ্বিতীয় সেজদা শেষ করে আবার الله اڪبر বলে সেজদা থেকে সুজা দাড়িয়ে যাবে। তারপর দ্বিতীয় রাকাতেও ঠিক প্রথম রাকাতের মতই । প্রথম সূরা ফাতেমা পড়বে । তারপর بسم الله الرحمن الرحيم পড়ে যে কোন একটি সূরা মিলাবে। তারপর প্রথম রাকাতের মতই রুকু সেজদা করবে। দুটি সেজদা শেষ করে দুই সেজদার মাঝে বসার ন্যায় বসবে এবং দুই হাত রানের উপর হাটু বরারব রাখবে । আর দৃষ্টি থাকবে কোলের দিকে। তারপর তাশাহ্হুদ পড়বে।

التحيات لله و الصلوات والطيبات السلام عليڪ ايها النبي ورحمة الله وبرڪاته السلام علينا وعلي عباد الله الصلحين اشهد الا اله الا الله واشهد ان محمدا عبده ورسوله

উচ্চারণঃ আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি অছ্ছলাওয়াতু অত্তয়্যিাবাতু আস্সালা মু আলাইকা আইয়ুহান্নাবিয়্যু অরহমাতুল্লাহি অবারকাতুহু আস্সালামু আলানা অআলা ইবাদিল্লাহিছ্ছলিহীন আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাহু অ আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু অরসূলুহু।

তাশাহ্হুদ পড়ার সময় ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও মধ্যমা অঙ্গুলি দ্বারা হালকা বানাবে এবং اشهد الا اله বলার সময় শাহাদাত অঙ্গুলি উঠাবে الا الله বলার সময় নামিয়ে ফেলবে। বাকী দুটি আঙ্গুল তালুর সাথে মিলিয়ে রাখবে। নামাজ যদি দুই রাকাত বিশিষ্ট হয়, তাহলে তাশাহ্হুদের পরে দরুদে ইব্রাহীম পড়বে।

اللهم صل علي محمد و علي ال محمد ڪما صليت علي ابراهيم و علي ال ابراهيم انڪ حميد مجيج اللهم بارڪ محمد و علي ال محمد ڪما بارڪت علي ابراهيم ر علي ال ابراهيم انڪ حميد مجيد

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ অ আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা অ আলা আলি ইব্রাহীম ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিউ অ আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারকতা আলা ইব্রাহীমা অ আলা আলি ইব্রাহীম ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।

তারপর দোয়ায়ে মাছুরা পড়বে।

اللهم اني ظلمت نفسي ظلما ڪثيرا و لا يغفر الذنوب الا انت فاغفرلي مغفرة من عندڪ انڪ انت الغفور الرحيم

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি জলামতু নাফছি জুলমান কাসিরান অলা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আন্তা ফাগফিরলী মাগফিরতাম মিন ইন্দিকা ইন্নাকা আন্তাল গফুরুররহীম।

তারপর السلام عليڪم ورحمة الله ( আস্সালামু আলাইকুম অরহমাতুল্লাহ) বলে সালাম ফিরাবে । প্রথমে ডান পাশে তারপর বাম পাশে। সালাম ফিরানোর সময় দৃষ্টি থাকবে কাঁধের দিকে ডান পাশে সালাম ফিরানোর সময় ডন কাঁধের দিকে আর বাম পাশে ফিরানোর বাম কাঁধের দিকে।

ডান পাশে সালাম ফিরানোর সময় সালামের দ্বারা নিয়্যত থাকবে ডান পাশের ফেরেশতাদের আর বাম পাশে সালাম ফিরানোর সময় নিয়্যত থাকবে বামপাশের ফেরেশতাদের ।

আর যদি তিন রাকাত বিশিষ্ট নামাজ হয়, তাহলে দুই রাকাতের পর যে বৈঠক হবে তাহবে প্রথম বৈঠক। এই প্রথম বৈঠকে শুধু তাশাহ্হুদ পড়ে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাড়িয়ে যাবে আর তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতেহা পড়বে কিন্তু কোন সূরা মিলাবে না।

তৃতীয় রাকাত শেষ করে তাশাহ্হুদ, দুরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাছুরা পরে সালাম ফিরাবে।

নামাজ যদি চার রাকাত বিশিষ্ট হয়, তাহলে প্রথম বৈঠকে শুধু তাশাহ্হুদ পড়বে তারপর আরো দুই রাকাত পড়বে।আর এই দুই রাকাতে শুধু সূরা ফাতেহা পড়বে, কোন সূরা মিলাবে না। চতুর্থ রাকাতের পরে শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ, দুরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাছুরা পড়ে সালাম ফিরাবে।

নামাজের মাকরুহাত

নামাজের মাকরুহাত

(১) চাদর বা জামা না পড়ে কাঁধে ঝুলিয়া রাখা ।

(২) ময়লা ধুলা-বালি লাগার ভয়ে কাপড়/জামা গুটানো ।

(৩) আঙ্গুল মটকান ।

(৪) বস্ত্র,শরীর অথবা দাঁড়ির সাথে খেলা করা ।

(৫) এদিক ওদিক দেখা ।

(৬) চুল মাথার উপরিভাগে বাঁধা ।

(৭) বিনা ওজরে সেজদার স্থানের ইট-পাথর সরান ।

(৮) আলস্যভরে শরীর মোড়ামুড়ি করা ।

(৯) সিজদার সময়ে হাত বিছিয়ে দেওয়া ।

(১০) আগের কাতারে স্থান থাকতে পিছনের কাতারে দাঁড়ানো ।

(১১) অবহেলা করে খালি মাথায় নামায পড়া ।

(১২) আকাশের দিকে তাকান ।

(১৩) ভাল কাপড় থাকা সত্ত্বেও মন্দ কাপর পড়ে নামায পড়া ।

(১৪) নামাযের মধ্যে কপালের মাটি মুছে ফেলা ।

(১৫) কোন প্রাণীর ছবি সম্মুখে,ডাইনে,বামে,মস্তকের উপর বা কাপড়ের মধ্যে থাকা ।

(১৬) সিজদার সময়ে বিনা কারণে হাটুর পূর্বে হাত মাটিতে রাখা ।

(১৭) বিনা কারণে আসন পেতে বসা ।

(১৮) ফরয নামাযে এক সূরা বার বার পড়া ।

(১৯) কোন মানুষের মুখের দিক হয়ে নামায পড়া ।

(২০) সিজদাতে পিঠ উভয় উরুর সহিত মিলিয়ে দেওয়া ।

(২১) এক হাত বা তদুর্ধ স্থানে ইমামের দাঁড়ান ।

(২২) উভয় সিজদার মধ্যে অথবা তাশাহুদ পড়ার সময়ে কুকুরের ন্যায় বসা ।

(২৩) দুই হাতে মাটি ভর দিয়া উঠা ।

(২৪) কোন সুন্নত পরিত্যাগ করা ।

(২৫) নাক মুখ ঢেকে নামাজ পড়া

নামাজের মুস্তাহাব সমূহ

নামাজের মোস্তাহাব সমূহ

(১) এক্বামতের সময়ে “হাইয়্যালাল ফালাহ্” বলামাত্র নামাযে ঠিকভাবে দাঁড়ান ।

(২) তাকবীরে তাহরীমা বলার সময়ে আন্তিন হতে হাতের তালু বাহির করা ।

(৩) দাঁড়াবার সময়ে সিজদার জায়গার প্রতি দৃষ্টি রাখা ।

(৪) রুকুতে পায়ের পাতার দিকে দৃষ্টি রাখা ।

(৫) বৈঠকে কোলের দিকে দৃষ্টি রাখা ।

(৬) সাধ্যানুযায়ী হাসি ও কাশি বন্ধ রাখা ।

(৭) রুকুতে মাথা ও পৃষ্ঠ ভাগ সমান উঁচু রাখা ।

(৮) সিজদায় প্রথমে দুই হাঁটু ,তারপর দুই হাত জমিনে রাখা, পরে নাক ও তারপরে কপাল জমিনে রাখা এবং সেজদা হতে উঠার সময়ে যথাক্রমে প্রথমে কপাল, পরে নাক উঠিয়ে তৎপর দুই হাত হাঁটুর উপরে রেখে বসা ।

(৯) সিজদায় দুই হাতের মধ্যে মাথা রাখা, নাক দুই বৃদ্ধাংগুলির মধ্যে বরাবর রাখা ।

(১০) হাত-পায়ের আঙ্গুলিসমূহ কেবলা মুখ করে রাখা ।

(১১) ছালাম ফিরানোর সময় দুই সিনার প্রতি দৃষ্টি রাখা ।

(১২) সেজদায় পুরুষের দুই হাত পৃথক ভাবে রাখা এইভাবে উঁচুতে রাখতে হবে যেন বকরীর বাচ্চা যাতায়াত করতে পারে । কিন্তু স্ত্রীলোকের জন্য সেজদায় এর বিপরীত করতে হবে । যেমন দুই হাত চাপিয়ে রাখা এবং রানের উপর পেট রাখা ।

(১৩) তিন বারের অধিক-বেজোড় তছবীহ্ পড়া ।

(১৪) ফযরের নামাযে (سورة الحجراة – سورة البلد ) এর মধ্যে যে কোন ২টি সুরা পড়া।

(১৫) আছরের নামাজে ( سورة الشمس – سورة البينة) এর মধ্যে যে কোন ২টি সুরা পড়া ।

(১৬) মাগরিবের নামাজে ছোট ছোট সূরাহ (سورة الزلزال - سورة الناس) পাঠ করা ।

(১৭) এশার নামাজে (سورة الحجراة – سورة البلد ) এর মধ্যে যে কোন ২টি সুরা পাঠ করা ।

নামাজের সুন্নাত সমূহ

নামাজের সুন্নাত সমূহ

(১) তাকবীর বলে দুই হাত কানের লতি পর্যন্ত উঠান ।

(২) হাতের আঙ্গুল পরস্পর পৃথক রাখা ।

(৩) ইমামের জন্য নামায আরম্ভের তাকবীর উচ্চঃস্বরে পড়া ।

(৪) ছানা পাঠ করা ।

(৫) “আউযুবিল্লাহ্” পাঠ করা ।

(৬) “বিছমিল্লাহ্” পাঠ করা ।

(৭) সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর ঈমাম ও মুস্তাদিগণের মৃদুস্বরে “আমীন” বলা ।

(৮) পুরুষের জন্য নাভীর নীচে তাহরিমা বাঁধা আর স্ত্রী লোকের জন্য ছিনার উপরে তাহরিমা বাঁধা

(৯) রুকুর তাকবীর বলা ।

(১০) রুকুতে দুই হাঁটু ধরা ও আঙ্গুল সমুহ পরস্পর পৃথক রাখা ।

(১১) রুকুর ভিতরে তিন, পাঁচ বা সাতবার তাছবীহ্ বলা ।

(১২) রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ান ।

(১৩) রুকু হতে উঠার সময়ে ইমামের “ছামিয়াল্লাহ হুলিমান হামীদা” ও মোক্তাদিগণের “রাব্বানা লাকাল হামদ” বলা ।

(১৪) সেজদায় গিয়ে দুই হাঁটু ও তাকবীর বলে বসা ।

(১৫) সেজদায় তাছবীহ্ পড়া ।

(১৬) পুরুষের জন্য ছেজদাহ হতে উঠে ডান পা খাড়া রেখে বাম পায়ের উপর বসা, আর স্ত্রীলোকের উভয় পা ডান দিকে বাহির করে ছতরের উপর বসা ।

(১৭) ছেজদা থেকে উঠার পর এক তছবীহ্ পরিমাণ সময় বসে থাকা ।

(১৮) দরুদ শরীফ পাঠ করা ।

(১৯) দোয়ায়ে মাছুরা পড়া ।

(২০) দুই দিকে ছালাম ফিরান ।

নামাজের সুন্নাতে মুয়াকাদ্দা

নামাজের সুন্নাতে মুয়াক্কাদা

নামাজের সুন্নাতে মুয়াক্কাদা হল এমন কার্যাবলি যা ছাড়লে নামাজ বাতিল হয়না কিন্তু বিনা কারনে ছাড়লে নামাজ মাকরুহ হয়।কারন বষত ছাড়া যায়।

(১) সানা পড়া।

(২) আউযু বিল্লাহি মিনা শাইতনির রজিম পড়া

(৩) বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম পড়া।

(৪) সুরা ফাতেহার শেষে আমিন বলা।

(৫) রুকুর তাকবির বলা।

(৬) রুকুর তাসবিহ পড়া।

(৭) রুকু থেকে উঠে সামিয়াল্লাহুলি মান হামিদা রব্বানা লাকাল হামদ হামদান কাছিরং তয়্যিবান মুবারকান ফিহ বলা।

(৮) সেজদার তাকবির বলা।

(৯) সিজদার তাসবিহ পড়া।

নামাজের ওয়াজিব সমূহ

নামাজের ওয়াজিব সমূহ

নামাজের মধ্যে মোট ওয়াজিব ১৪টি। এগুলো একটি ভুল করে ছেড়ে দিলে শেষ বৈঠকে সিজদায় সাহু পড়তে হবেঃ

(১) সুরা ফাতিহা পড়া

(২) সুরা ফাতেহার সঙ্গে সুরা মিলানো

(৩) রুকু ও সেজদায় দেরী করা

(৪) রুকু হইতে সোজা হয়ে দাঁড়ানো

(৫) দুই সেজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসা

(৬) দরমিয়ানী বৈঠক

(৭) দুই বৈঠকে আত্ত্যাহিয়াতু পড়া

(৮) ঈমামের জন্য কেরাত আস্তের জায়গায় আস্তে পড়া এবং জোরে জায়গায় জোরে পড়া

(৯) বিতিরের নামাজে দোয়া কুনুত পড়া

(১০) দুই ঈদের নামাজে ছয় তকবীর বলা ৷

(১১) ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাত কেরাতের জন্য নির্ধারিত করা ৷

(১২) প্রত্যেক রাকাতের ফরজ গুলির তরতীব ঠিক রাখা ৷

(১৩) প্রত্যেক রাকাতের ওয়াজিব গুলির তরতীব ঠিক রাখা ৷

(১৪) আস্আলামু আ'লাইকুম ও'রাহ...বলিয়া নামাজ শেষ করা

নামাজের ফরজ সমূহ

নামাজের ফরজ সমূহ

নামাজের বাহিরে এবং ভিতরে ১৩টি ফরজ রয়েছে।

নামাজের বাহিরে ৭ ফরজ

(১) শরীর পাক

(২) কাপড় পাক

(৩) নামাজের যায়গা পাক

(৪) সতর ঢাকা

(৫) ক্বিবলামূখী হওয়া

(৬) ওয়াক্ত মত নামাজ পড়া

(৭) নামাযের নিয়ত করা

নামাজের ভেতরে ৬ ফরজ

(১) তাকবীরে তাহরীমাহ বলা

(২) দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া

(৩) ক্বির আত পড়া

(৪) রুকু করা

(৫) দুই সিজদা করা

(৬) আখিরী বৈঠক

ছালামের সহিত নামায ভঙ্গ করা সুন্নত । নামায আদায় করতে গিয়ে উপরোক্ত ১৪টি [বাহিরের ৭ টি + ভেতরের ৬টি] ফরযের কোন একেটি ভুলেও ছেড়ে দিলে নামায শুদ্ধ হবে না; নামায পুণরায় পড়তে হবে|

ওযু করার সঠিক নিয়ম

অযুর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা।আর শরীয়াতের পরিভাষায় পরিষ্কার পানি দ্বারা এক বিশেষ পদ্ধতিতে মুখমন্ডল, হাত ও পা ধৌত করা এবং মাথা মাসেহ্ করাকে অযু বলে। আমরা যারা নামায পড়ি তারা সবাই ওজু করি । কিন্তু আমাদের ওজু কি মুহাম্মদ ( সাঃ ) এর ওজুর মত ????? বিশেষ করে আমাদের অনেকেরই নাকে পানি দেয়া , কুলি করা ও মাথা মাসাহ করা সুন্নাত সম্মত হয় না । আসুন ওজুর ফরয ও সুন্নতগুলু জেনে নেই। পবিত্র কুরআনে সুরা মায়েদাতে আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ অর্থ : “হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখ মন্ডল ও দুই হাত কনুই সহ ধৌত করবে, এবং তোমাদের মাথা মাসেহ করবে, আর দুই পা গোড়ালীসহ ধৌত করবে।” [সূরা মায়িদাহঃ আয়াত-৬] ওজুর ফরয চারটি। (১) মুখ মন্ডল ধৌত করা। (২) দুই হাত কনুই সহ ধৌত করা। (৩) মাথার চার ভাগের এক ভাগ মাসেহ করা এবং (৪) দুই পা টাখনু সহ ধৌত করা। এছাড়াও আমরা যে মিসওয়াক করি, কব্জি পর্যন্ত হাত ধুই,গড়গড়া করি বা নাকে পানি দেই ইত্যাদি করি, এগুলো সুন্নত। তাই পরিপূর্ণ ওজু করতে গেলে সময়ের এবং পানির অভাব না থাকলে, অবশ্যই এগুলোও পালন করতে হবে এবং তিনবার করে। ওজুর পদ্ধতি- বিসমিল্লাহ সহকারে অযুর নিয়ত করুন। (১) নিয়তঃ আমি পবিত্রতা অর্জন করা বা ইবাদত করা অথবা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার জন্য অজু করছি। (২) প্রথমে উভয় হাতের কবজি পর্যন্ত ধোয়াঃ ডান হাতে পানি নিয়ে ডান হাতের কবজি তিনবার ধৌত করবে। এরপর ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাতের কবজির উপর পানি ফেলে তিন বার ধৌত করবে। লক্ষণীয়ঃ হাতে নাপাকী থাকলে যে কোন উপায়ে প্রথমে হাত ধুয়ে নিতে হবে। (৩) মিসওয়াক করাঃ কুলি করার পূর্বে মিসওয়াক করা সুন্নত। মিসওয়াক অজু শুরু করার পূর্বেও করা যায়। মিসওয়াক না থাকলে কিংবা মুখে ওজর থাকলে বা দাঁত না থাকলে আঙ্গুল দিয়ে হলেও ঘষে নিবে। (৪) কুলি করাঃ ডান হাতে পানি নিয়ে কুলি করবে। রোজাদার না হলে গড়গড়া করা সুন্নত। তিনবার কুলিকরা সুন্নত। তিনবারের জন্য আলাদা আলাদা তিনবার পানি নিতে হবে। (৫) নাকে পানি দেওয়াঃ ডান হাতে নাকে পানি দিবে এবং বাম হাত দ্বারা নাক ঝাড়বে। বাম হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলের অগ্রভাগ দিয়ে নাক পরিস্কার করবে। তাছাড়া কনিষ্ঠ ও বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়েও নাক পরিস্কার করা যায়। তিনবার নাকে পানি দেওয়া সুন্নত। রোজাদার না হলে নাকের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌঁছানো উত্তম। নাকে অলংকার এবং হাতে আংটি থাকলে তা নারা—চাড়া করে নিচে পানি পৌঁছে দেওয়া ওয়াজিব। (৬) মুখমন্ডল ধোয়াঃ উভয় হাতে পানি নিয়ে সমস্ত মুখমন্ডল ধৌত করবে। অর্থাৎ, কপালের চুলের গোড়া থেকে থুতনীর নিচ এবং উভয় কানের লতি পর্যন্ত এমনভাবে পানি পৌঁছানো, যাতে উক্ত অঙ্গ থেকে পানি ফোঁটা ফোঁটা নিচে গড়িয়ে পড়ে। একবার ধোয়া, তিনবার ফরয, তিন বার ধোয়া সুন্নাত। (৭) দাড়ি ও গোঁফ : দাড়ি ও গোঁফ খুব ঘন হলে শুধু ধোয়া ফরয। চামড়ায় পানি পৌঁছানো ফরয নয়। দাড়ির ভেতরে আঙ্গুল চালিয়ে খিলাল করে নিবে। (৮) উভয় হাত কনুই উভয় হাত কনুই সহ ধৌত করবে। একবার ধোয়া ফরয, তিনবার ধোয়া সুন্নাত। হাত ধোয়ার সময় আঙ্গুল খিলাল করবে, যাতে আঙ্গুলের গোড়ায় পানি পৌঁছে যায়। অর্থাৎ এক হাতের আঙ্গুল অপর হাতের আঙ্গুল সমূহের মধ্যে প্রবেশ করাবে। বিঃদ্রঃ কারো আঙ্গুলের মধ্যে যদি ফাঁক না থাকে এবং আঙ্গুলের সাথে অপর আঙ্গুল এমনভাবে লেগে থাকে যার কারণে আঙ্গুলের সাথে পানি না পৌঁছার আশঙ্কা থেকে যায়, এ অবস্থায় খিলাল করা ওয়াজিব। (৯) মাথা মাসেহ করাঃ মাথার চার ভাগের একভাগ মাসেহ করা ফরয, সমস্ত মাথা মাসেহ করা সুন্নাত। (১০) মাথা মাসেহের নিয়মঃ বৃদ্ধ ও তর্জনী আঙ্গুলদ্বয় ব্যতীত অবশিষ্ট উভয় হাতের আঙ্গুলের পেট মাথার মধ্যে ভাগে সামনে হতে পিছন দিকে টেনে নিয়ে যাবে। অতঃপর দুই হাতের তালু মাথার দুই পাশে রেখে পেছন দিক থেকে সামনে টেনে নিয়ে আসবে। (১১) কান মাসেহ করাঃ উভয় হাতের বৃদ্ধ আঙ্গুলের পেট দ্বারা দুই কানের পেছনের অংশ মাসেহ করা। এরপর কনিষ্ট আঙ্গুলের অগ্রভাগ দ্বারা কানের ছিদ্র এবং তর্জনী আঙ্গুলের সাহায্য কানের পাতার ভেতরে অংশ মাসেহ করা সুন্নাত। (১২) গর্দান মাসেহ করাঃ উভয় হাতের তিন আঙ্গুলের পিঠ দ্বারা গর্দান মাসেহ করবে। গলা মাসেহ করবে না। (১৩) গোড়ালী ও টাখনুসহ পা ধোয়াঃ ডান হাত দিয়ে পায়ের অগ্রভাগে পানি ঢালা সুন্নাত। বাম হাত দিয়ে পায়ের সামনে পেছনে এবং তলদেশ মর্দন করবে। পা দিয়ে ঘষে এবং বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে পায়ের আঙ্গুলসমূহ খিলাল করে নিবে। (১৪) অজুর শেষে কালিমায়ে শাহাদাত পড়া মুস্তাহাব। ওজু শেষ হবার পর নিচের দু’আ পড়তে হবে- ”আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু-লা-শারীকা লাহু ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আ’বদুহু-ওয়া রাসূলুহু।” অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন মা’বুদ নাই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দাহ ও রাসূল। অজুর ফরজ সমুহ:- (১) সমস্ত মুখমন্ডল একবার ধোয়া। (২) কনুই সহ উভয় হাত একবার ধোয়া। (৩) মাথা মসেহ করা। (৪) টাখনু সহ উভয় পা একবার ধোয়া। বি:দ্র:-কোন ফরজ বাদ পড়লে অজু হবেনা।কিন্তু সুন্নত বাদ পড়লে অজু হয়ে যাবে তবে সুন্নতের সওয়াব থেকে মাহরুম হবে। অজুর সুন্নত সমুহ:- (১) বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে অজু শুরু করা। (২) কবজি সহ উভয় হাত তিন বার ধোয়া। (৩) কুলি করা। (৪) নাকে পানি দেওয়া। (৫) মেসওয়াক করা। (৬) সমস- মাথা একবার মসেহ করা। (৭) প্রত্যেক অঙ্গ তিন বার করে ধোয়া। (৮) কান মসেহ করা। (৯) হাতের আঙ্গুল সমুহ খেলাল করা। (১০) পায়ের আঙ্গূল সমুহ খেলাল করা। (১১) ডান দিক থেকে অজু শুরু করা। (১২) ক্বোরানে বর্নিত ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। (১৩) গর্দান মসেহ করা। (১৪) অজু শুরুতে মেসওয়াক করা। (১৫) দুই কান মসেহ করা। (১৬) এক অঙ্গের পানি শুকানোর পুর্বেই অন্য অঙ্গ ধৌত করা। বি:দ্র: পুরুষের ঘন দাড়ি থাকলে মুখমন্ডল ধোয়ার পর ভিজা হাতে তিন বার দাড়ি খিলাল করতে হবে। অজুর মাকরূহ সমুহ। (১) অযুর সুন্নত সমুহের যে কোন সুন্নত ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দিলে অযু মাকরূহ হবে। (২) প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ব্যয় করা। (৩) মুখমন্ডল ধৌত করার সময় সজোরে মুখে পানি নিক্ষেপ করা। (৪) বিনা ওজরে বাম হাত দ্বারা কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়ার এবং ডান হাতে নাক পরিস্কার করা। (৫) অপবিত্র স্থানে অযু করা। (৬) মসজিদের মধ্যে অযু করা,তবে কোন পাত্রের মধ্যে অযু করা জায়েয। (৭) কফ্‌কাশী বা নাকের ময়লা অযুর পানির মধ্যে নিক্ষেপ করা। (৮) বিনা কারনে অন্যের সাহায্য নেওয়া। অযুর প্রকারবেদঃ- অযু পাঁচ প্রকার ফরজ,ওয়াজিব,সুন্নত,মাকরূহ ও হারাম ওজু। (১) সকল প্রকার নামায পড়া ও কোরআন শরীফ তেলয়াতের জন্য এবং সেজদার তেলয়াতের জন্য অজু করা ফরজ। (২) কাবা শরীফ তওয়াফ করার জন্য ওয়াজিব। (৩) মোস্তাহাব বা সুন্নত ওজু হলো যা শরীর পাক রাখার জন্য করা হয় অর্থাৎ সব সময় ওজু রাখা সুন্নত। (৪) অযু করে কোন ইবাদত না করে সেই অযু থাকা অবস্থায় নতুন অযু করা মাকরূহ। (৫) হারাম অযু হলো কারো মালিকাধীন পানি জোরপুর্বক নিয়ে কিংবা ইয়াতীমের সংরক্ষিত পানি দিয়ে অযু করা হারাম। অযু ভাঙ্গার কারন সমুহঃ- (১) প্রসাব-পায়খানা করলে। (২) পায়খানার রাস্তা দিয়ে বায়ু নির্গত হলে। (৩) শরীরের কোন অংশ থেকে রক্ত বা পুঁজ বের হয়ে গড়িয়ে পড়লে। (৪) নিদ্রামগ্ন হলে। (৫) মুখ ভরে বুমি করলে। (৬) নামাযের মধ্যে সশব্দে হাসলে। (৭) পাগল বা মাতাল হলে। (৮) কারো নাক দিয়ে কোন কিছু ঢুকে মুখ দিয়ে বের হলে। (৯) যদি মুখ দিয়ে থুথুর সাথে রক্ত বের হয় এবং থুথুর চেয়ে রক্তের পরিমান বেশী বা সমান হয় তাহলে ওজু ভেঙ্গে যাবে। (১০) স্ত্রীকে কাম ভাব সহকারে স্পর্শ করলে ওজু ভঙ্গ হয়ে যাবে। (১১) লজ্জা স্থানে বিনা আবরনে হাত পড়লে ওজু ভঙ্গ হয়ে যাবে। মাসয়ালা (১) কোন কিছুর আঘাতে বা মেসওয়াকের কারনে থুথুর সাথে রক্ত দেখা গেলে ওজূ যাবেনা।যতক্ষন না রক্ত প্রবাহিত হয়ে মুখ থেকে বের হয়ে আসে। (২) স্ত্রী-স্বামীকে কিংবা স্বামী-স্ত্রীকে স্বাভাবিক ভাবে স্পর্শ করলে(কাম ভাব ব্যতিত)ওজু নষ্ট হয় না। (৩) লজ্জা স্থানে কোন কাপড়ের উপর দিয়ে হাত পড়লে বা নজর পড়লে ওজু নষ্ট হয় না। (৪) কারো ওজু ছিল হঠাৎ সন্দেহ হলো যে,ওজু আছে কি নাই।এই অবস্থায় ওজু আছে বলে ধরে নিতে হবে।তবে নতুন ওজু করে নেওয়াই উত্তম। (৫) কারো ওজু ছিলনা পরে ওজু করেছে কিনা তা সন্দেহ হলে এই অবস্থায় ওজু করে নিতে হবে। তায়াম্মুমঃ- “অতঃপর পানি না পাও তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও অর্থাৎ স্বীয় মুখ মন্ডল ও হস-দ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল”।--মায়িদা-৬। সংখিপ্ত ভাবে অজু করার বর্ননা:- বিসমিল্লাহ বলে অজু আরম্ভ করিতে হবে।প্রথমে দুই হাতের কব্জি পর্যন- তিনবার ধুতে হবে।তারপর মুখে পানি দিয়ে কুলি করতে হবে এবং মেছওয়াক করতে হবে।রোজা না থাকলে গরগরার সহিত কুলি করতে হবে।তারপর তিন বার নাকে পানি দিয়ে ভাল করে ধুতে হবে অর্থাৎ বাম হাতের আঙ্গুলি দিয়ে নাক পরিস্কার করে নিতে হবে। তারপর সম্পুর্ন মুখ মন্ডল তিনবার ধুতে হবে। তারপর প্রথমে ডান হাত এবং পরে বাম হাত কনুইসহ তিনবার করে ধুতে হবে। তারপর সমস- মাথা একবার মসেহ করতে হবে। তারপর তারপর দুই হাতের পিঠ দিয়ে ঘার মসেহ করতে হবে।সবশেষে প্রথমে ডান পা পরে বাম পা টাকনু সহ তিনবার করে ধুতে হবে। মাসয়ালা:- (১) মুখমন্ডল ধোয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন মাথার চুলের গোড়া থেকে থুতনি পর্যন্ত এবং এক কানের লতি থেকে অন্য কানের লতি পর্যন- ধোয়া হয়।দুই হাতের সাহায্যে ভালোভাবে মুখমন্ডল ধুতে হবে।খেয়াল রাখতে হবে যেন দুই ভ্রুর পশমের গোড়া পর্যন্ত পানি পৌছে।যদি মুখ এবং চোখ এরকম জোর করে বন্ধ করে রাখা হয় যাতে চোখের পাতা অথবা ঠোটের কিছু অংশ শুকনা থাকে তবে অজু হবেনা। (২) পুরুষগন মুখ মন্ডল ধোয়ার পর ভিজা হাতের আঙ্গুলি দিয়ে দাড়ি খেলাল করবে তবে তিনবারের বেশী খেলাল করবেনা। (৩) অজুর মধ্যে থুতুনি ধোয়া ফরজ।থুতুনিতে দাড়ি থাকুক বা না থাকুক।অর্থাৎ ইহা মুখমন্ডল ধোয়ার আওতায় পরে। (৪) মুখ বন্ধ করলে ঠোটের যে অংশ স্বাভাবিক ভাবে দেখা যায় সে অংশ ধোয়া ফরজ। (৫) হাতে আংটি থাকলে,মেয়েদের চুড়ি থাকলে এর নীচে পারি পৌছাতে হবে।নাকের নথের নীচের চামড়াতেও পানি পৌছাতে হবে। (৬) নখের ভিতর আটা বা চুন ঢুকে শক্ত হয়ে থাকার কারনে যদি নখের ভিতরে পানি না যায় তবে আটা বা চুন বের করে সেখানে পানি পৌছাতে হবে। (৭) এক অঙ্গ ধোয়ার পর আর এক অঙ্গ ধুতে এত দেরী করা ঠিক হবেনা যাতে ইতিমধ্যে প্রথম অঙ্গ শুকিয়ে যায়। (৮) প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার সময় ভাল করে ঘষে মেজে ধোয়া জরুরী। (৯) হাতের পায়ের নখে পালিশ থাকলে তা প্রথমে তুলে ফেলে ওজু করতে হবে। (১০) ওজু করার পর যদি দেখা যায় হাতের বা পায়ের কোন অংশ শুকনা রয়ে গেছে তাহলে সেখানে পানি প্রবাহিত করে দিতে হবে।শুধু ভিজা হাতে মুছলে হবে না। (১১) ওজু করার সময় দুনিয়ার কথাবার্তা বলা,নাপাক স'ানে বসে ওজু করা মাকরুহ।

নামাজ ফরজ হওয়ার শর্ত

পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।

নামাজ ইসলামের অন্যতম প্রধান রোকন এবং মুমীন বান্দার জন্য একটি অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। নামাজ ফরজ হওয়ার শর্তসমূহ হলোঃ

(১) মুসলমান হওয়া

(২) বয়স কমপক্ষে ৭ বৎসর হওয়া এবং

(৩) সুস্থ মস্তিস্কের হওয়া।

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

নামাজের গুরুত্ব

নামায সব এবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবাদত হওয়ার পেছনে অনেক গুলো কারন রয়েছে । প্রথমতঃ নামাযরত অবস্থায় কোন পার্থিব কাজ করা যায় না । কেননা...

Popular Posts