জানাযা নামাজের নিয়ম

জানাযা নামাজের নিয়ম

মৃত ব্যক্তির গোসলসম্পাদনা

জানাযার পূর্বে মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানো হয়। মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ানো ফরযে কেফায়া বা আবশ্যকীয় কর্তব্য। মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায় কোন অপরিচিত মৃতদেহ পাওয়া গেলে এবং তাকে অমুসলিম বিবেচনা করার কারণ না থাকলে মুসলিম জ্ঞানে তাকে গোসল করাতে হবে। মৃত ব্যক্তি পুরুষ হরে তাকে গোসল করাবে কোন পুরুষ ব্যক্তি, একইভাবে মৃত ব্যক্তি নারী হলে তাকে গোসল করাবে আরেকজন নারী। গোসল সমাপনান্তে মৃত ব্যক্তিকে কাফন পরাতে হবে। গোসল করানোর জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি পাওয়া না গেরেতায়াম্মুমকরাতে হবে।কাফনসম্পাদনা

কোন মৃত মুসলমানকে মাটিতে দাফন করার পূর্বে যে কাপড় পরানো হয় তাকাফননামে অভিহিত। কাফন ব্যতিরেকে জানাযা পড়া যায় না।জানাযার পদ্ধতিসম্পাদনা

জামাতের সঙ্গে বা দলবদ্ধভাবে জানাযার নামায অনুষ্ঠিত হয়। তবে জামায়াতে জানাযা আদায় করা শর্ত নয়। নামাযে অংশগ্রহণকারীরা ইমামের পেছনে এক/তিন বা এরকম বেজোড় সংখ্যক কাতারে বা সারিতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে এ নামায আদায় করেন। নামাযের আগেঅযুকরে পবিত্রতা অর্জন করা আবশ্যক। দাঁড়িয়ে এ নামাজ আদায় করতে হয় এবং সালাম ফেরানোর মধ্য দিয়ে এ নামায শেষ হয়। জানাযার নামাযে রুকু এবং সেজদা নাই। এটি ৪তাকবিরেরনামাজ।

নিয়ত পাঠের পর প্রথম তাকবির উচ্চারণের মধ্য দিয়ে জানাযার শুরু। প্রথম তাকবিরের পর বুকে হাত বাঁধতে হবে। তারপরসানাপড়তে হয় ও সানা পাঠ শেষে দ্বিতীয় তাকবির দিতে হয়। দ্বিতীয় তাকবিরের পরদরূদপাঠ করতে হবে। দরূদ পাঠান্তে তৃতীয় তাকবির দিতে হবে। তৃতীয় তাকবির উচ্চারণের পর মৃত ব্যক্তির জন্য নির্ধারিত দোয়া পাঠ করতে হয়। মৃত ব্যক্তি বালেগ বা পূর্ণবয়ষ্ক হলে একরকম আর নাবালেগ বা অপ্রাপ্তবয়ষ্ক পুরুষের ক্ষেত্রে আলাদা এবং অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক নারীর ক্ষেত্রে আলাদা দোয়া রয়েছে। দোয়া পাঠ শেষে চতুর্থ তকবির দিতে হয় এবং তার পরপরই প্রথমে ডানে ও পরে বামে সালাম ফেরাতে হয়। ডান দিকে সালাম ফিরিয়ে ডান হাত ও বাম দিকে সালাম ফিরিয়ে বাম হাত ছাড়া যায়, তবে উভয় দিকে সালাম ফিরিয়ে উভয় হাত একসঙ্গে ছাড়াটাই উত্তম।গায়েবী জানাযাসম্পাদনা

মরদেহের অবর্তমানে যে জানাযা তাকে "গায়েবী জানাযা" বলা হয়। কিন্ত ইসলামী শরিয়তের বিধান মোতাবেক ইমামের অবস্থানের ঠিক আগে মরদেহ রেখে জানাযার নামায আদায় করতে হবে। সুতরাং মৃতদেহের সাক্ষাৎ উপস্থিতি ব্যতিরেকে জানাযার নামায আদাযের শরিয়তসম্মত সুযোগ নাই।

জানাযা নামাযের নিয়ত

نَوَيْتُ اَنْ اُؤَدِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى اَرْبَعَ تَكْبِيْرَاتِ

صَلَوةِ الْجَنَا زَةِ فَرْضَ الْكِفَايَةِ وَالثَّنَا ءُ لِلَّهِ

تَعَا لَى وَالصَّلَوةُ عَلَى النَّبِىِّ وَالدُّعَا ءُلِهَذَا

الْمَيِّتِ اِقْتِدَتُ بِهَذَا الاِْمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ

الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ

উচ্চারণঃ

নাওয়াইতু আন উয়াদ্দিয়া লিল্লাহে তায়ালা আরবাআ তাকবীরাতে ছালাতিল জানাযাতে ফারযুল কেফায়াতে আচ্ছানাউ লিল্লাহি তায়ালা ওয়াচ্ছালাতু আলান্নাবীয়্যে ওয়াদ্দোয়াউ লেহাযাল মাইয়্যেতে এক্কতেদায়িতু বিহাযাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতে আল্লাহু আকবার।

অনুবাদঃ

আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে জানাযা নামাজের চারি তাকবীর ফরযে কেফায়া কেবলামুখী হয়ে ইমামের পিছনে আদায় করার মনস্থ করলাম। ইহা আল্লাহু তায়ালার প্রশংসা রাসূলের প্রতি দরূদ এবং মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া (আর্শীবাদ) আল্লাহ মহান।

নিয়তের মধ্যে অন্যান্য জামাতের নামাযের নিয়তের ন্যায় ইমাম তাহার অতিরিক্ত খাছ কালাম (আনা ইমামুল লেহেজাল কউম) এবং মোক্তাদিগণ তাহাদের অতিরিক্ত খাছ কালামটি পাঠ করিলে। (একতেদাইতুল বেহাযালইমাম) আর নিয়তের ‘লেহাযাল মাইয়্যেতে’ শব্দটি কেবল পুরুষ লাশের বেলায় বলিতে হইবে, কিন্তু স্ত্রী লাশ হইলে ঐ শব্দটির স্থলে ‘লেহাযিহিল মাইয়্যেতে’ বলিতে হইবে।

নিয়তের পরে ছানা

سُبْحَا نَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَا

لَى جَدُّكَ وَجَلَّ ثَنَاءُكَ وَلاَ اِلَهَ غَيْرُكَ

উচ্চারণঃ

সুবহা-নাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তায়ালা জাদ্দুকা, ওয়া জাল্লা ছানাউকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা।

অনুবাদঃ

হেআল্লাহআমরাতোমারপবিত্রতার গুণগান করিতেছি। তোমার নাম মংগলময় এবংতোমারস্তুতি অতি শ্রেষ্ঠ,তুমিব্যতীত আর কেহই উপাস্য নাই।

ছানার পরে তাকবীর বলিয়া তাশাহুদের পরের দরূদ পড়িতে হয়।

দুরুদ শরীফ

اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا

صَلَّيْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَ اهِيْمَ اِنَّكَ

حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ- اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى

اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى

اَلِ اِبْرَا هِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌمَّجِيْدٌ

উচ্চারনঃ

আল্লাহুম্মা সাল্লিআলা মুহাম্মাদিঁ ওয়া আলা আলি মুম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলাইব্রাহীমাওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামিদুম্মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিঁ ওয়া আলা আলিমুহাম্মাদিনকামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।

অনুবাদঃ

যেআল্লাহ!মুহাম্মদ(সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর ঐরূপ আশীর্বাদ অবতীর্ণ কর যেইরূপ আর্শীবাদহযরত ইব্রাহিম (আঃ)এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর অবতীর্ণ করিয়াছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসা ভাজন এবংমহামহিম। হে আল্লাহ!মুহাম্মদ(সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর সেইরূপ অনুগ্রহ কর যে রূপ অনুগ্রহ ইব্রাহীম (আঃ) এবং তাঁহার বংশরগণের উপর করিয়াছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসা ভাজন এবংমহামহিম।

জানাযার দোয়া

اَلَّهُمَّ اغْفِرْلحَِيِّنَاوَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا

وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَاُنْثَا نَا اَللَّهُمَّ مَنْ

اَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَاَحْيِهِ عَلَى الاِْسْلاَمِ وَمَنْ

تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَىالاِْيمَانِ بِرَحْمَتِكَ

يَاَارْ حَمَالرَّحِمِيْنَ

উচ্চারণঃ

আল্লাহুম্মাগফিরলি হাইয়্যেনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহীদিনা ওয়া গায়িবিনা ও ছাগীরিনা ও কাবীরিনা ও যাকারিনা ও উনছানা। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলালইসলামীওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ ফাহু আলাল ঈমান বেরাহমাতিকা ইয়া আর হামার রাহীমিন।

অনুবাদঃ

হেআল্লাহ্আমাদের জীবিত ও মৃত উপস্থিত ও অনুপস্থিত বালকও বৃদ্ধ পুরুষ ও স্ত্রীলোকদিগকে ক্ষমা কর। হে আল্লাহ আমাদের মধ্যে যাহাদিগকে তুমি জীবিত রাখ তাহাদিগকে মৃত্যুর মুখে পতিত কর। তাহাদিগকে ঈমানের সাথে মৃত্যু বরণ করাইও।

লাশ যদি নাবালক ছেলে হয় তবে নিচের দোয়া পড়তে হবে

اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًاوْ اَجْعَلْهُ لَنَا اَجْرً

اوَذُخْرًا وَاجْعَلْهُ لَنَا شَا فِعًة وَمُشَفَّعًا-

উচ্চারণঃ

আল্লাহুম্মাজ আলহুলানা ফারতাঁও ওয়াজ আলহুলানা আজরাও ওয়া যুখরাঁও ওয়াজ আলহুলানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফায়ান।

অনুবাদঃ

হে আল্লাহ! উহাকে আমাদের জন্য অগ্রগামী কর ও উহাকে আমাদের পুরস্কার ও সাহায্যের উপলক্ষ কর এবং উহাকেআমাদেরসুপারিশকারী ও গ্রহনীয় সুপারিশকারী বানাও।

লাশ যদি নাবালেগা মেয়ে হয় তবে নিচের দোয়া পড়তে হবে।

اَللَّهُمَّ اجْعَلْهَ لَنَا فَرْطًا وَاجْعَلْهَ لَنَا اَجْرً

اوَذُخْرًا وَاجْعَلْهَ لَنَا شَا فِعً وَمُشَفَّعًا

উচ্চারণঃ

আল্লাহুম্মাজ আলহা লানা ফারতাঁও ওয়াজ আলহা লানা আজরাঁও ওয়া যুখরাঁও ওয়াজ আলহা লানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফায়ান।

অনুবাদঃ

হে আল্লাহ! ইহাকে আমাদের জন্য অগ্রগামী কর ও ইহাকেআমাদেরপুরস্কার ও সাহায্যের উপলক্ষ কর। এবং ইহাকেআমাদেরসুপারিশকারী ও গ্রহনীয় সুপারিশকারী বানাও। দুইহাত দুইপাশে ঝুলাইয়া ইমাম সাহেব ডানে এবং বামে ছালাম ফিরাইবে।

1 টি মন্তব্য:

Thanks for your comment

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

নামাজের গুরুত্ব

নামায সব এবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবাদত হওয়ার পেছনে অনেক গুলো কারন রয়েছে । প্রথমতঃ নামাযরত অবস্থায় কোন পার্থিব কাজ করা যায় না । কেননা...

Popular Posts